মনসুর গাঢ় কন্ঠে বললো,’একটু শুনবেন?’
কণা বললো, ‘জি, বলুন?’
‘আপনার হাতটা একটু দেখি?’
কণা ভারি অবাক হলো। সে রাজ্যের দ্বিধা ও কৌতূহল নিয়ে তার ডান হাতখানা বাড়ালো। মনসুর তার হাতের তালুতে কিছু একটা রাখলো। কোনো চিরকুট কি? কণা তখনো জানে না। সে শুধু জানে, এই ভ্যাপসা গরম আর অদ্ভুত নৈঃশব্দ্য ভেদ করেও তা বুকের ভেতর শিরশির করে ঢুকে যাচ্ছে উত্তুরে হাওয়া, পাখির কোলাহল, অজস্র শব্দ, কম্পন ও কান্না। মন্সুর কণার হাতের আঙ্গুলগুলোকে আলতো স্পর্শে মুঠো করে দিলো।
সেই মুঠোর ভেতর কি? চিঠি?
কণা জানে না। সে কেবল জানে, তার সারা শরীর কাঁপছে। বুকের ভেতর বয়ে যাচ্ছে শ্রাবণের উথালপাতাল নদী। সেই নদী ভাসিয়ে নিতে জানে মন ও মানুষ।
সেই রাতে, যখন বাড়ির সবাই ঘুমুচ্ছে, ঠিক তখন কণা তার ঘরের হারিকেনের মৃদু আলোটাকে আরো খানিক মৃদু করে দিয়ে খুব গোপনে চিরকুটখানা খুললো। সে শুনেছে ডাক্তারদের হাতের লেখা জঘন্য হয়। কিন্তু মনসুরের হাতের লেখা মুক্তোর মতো ঝকঝকে। একটা ধবধবে সাদা কাগজে সে লিখেছঃ
‘কণা,
এই যে কিছুক্ষন আগে চিঠিটা দেয়ার সময় আমি ইচ্ছে করেই আপনার হাত স্পর্শ করেছি, আপনি কি তা বুঝতে পেরেছেন? কেন করেছি জানেন? করেছি এটি বোঝার জন্য যে আপনি আমার মনের কোনো কল্পনা ননতো?
আপনি যদি সত্যি না হয়ে মিথ্যে হন, আমার কল্পনা বা স্বপ্ন হন, তাহলে বিষয়টা খুব বিচ্ছিরি হবে। খুব।
আপনিবিহীন এই পৃথিবীটা কী ভীষণ জগন্য!’
শেষের লাইনটা কণা আরো বার কয়েক পড়লো। তারপর আরো বার কয়েক। তারপর আবার ও। পড়তেই থাকল। তারপর তার আচমকা মনে হলো, আচ্ছা মানুষটা এত সুন্দর করে কি করে বললো, আপনিবিহীন এই পৃথিবীটা কী ভীষণ জগন্য!’
কণা তাকালো, বাইরে অন্ধকার। একনাগাড়ে ঝিঁঝিঁপোকা ডেকে যাচ্ছে। চাঁদ কজী উঠেছে? সে জানে না, কিন্তু সে এটা জানে, ওই মানুষটাকে ছাড়া তার জগৎটাও কী যে জঘন্য, কি ভীষণ জগন্য
Publisher:
অন্যধারা
Category:
বইমেলা-২০১৯
ISBN: 9789849366119
Number of pages: -