জনমভর

(author),
740 TK 555 TK
- Pages
  • Save 185 Tk.

Description
গুলবানুর কথা শুনে হোসনে আরা ভুরু কুঁচকে ফেলেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে অন্যঘরে যাবার প্রস্তুতি নিতে নিতে বলেন, 'যাও মা তুমি কি কইতাছো না কইতাছো, কীয়ের পোকা-টোকা, আমি কিছুই বুইজ্যা উডতে পারতাছি না।' বলে হোসনে আরা অন্যঘরে চলে এলেন তাঁর স্বামীর কাছে। দেখতে পেলেন মেছের আলি দুয়ারে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। তিনি ভাবতে লাগলেন, মেছের আলি আকাশের দিকে তাকিয়ে কি দেখছেন! আজ তো অমাবস্যা রাত। আকাশে দেখার মতো কিছু নেই। হোসনে আরা মেছের আলির পাশে বসতে বসতে বললেন, 'কী দ্যাখতাছেন আসমানে তাকাইয়া! আইজ দ আসমানে চান নাই, তারা নাই দ্যাখার দ কিচ্ছুই নাই, তাকাইয়া আছেন যে!' হোসনে আরার কথা শুনে মেছের আলি কিছুটা অবাক হলেন। তিনি ভাবতে লাগলেন, 'হোসেনে আরা বুঝলো কি কইরা আমি আসমানের দিকে তাকাইয়া আছি!' তাঁর ভাবনায় ভুল ধরা পড়লো তখন যখন কিনা তিনি আবার ভাবতে লাগলেন, 'আসমানের দিকে মুখ কইরা থাকলে তো বুঝনেরই কতা আমি আসমানে তাকাইয়া আছি। এইডা দ না বুঝনের কিচ্ছু নাই! হোসনে আরা অল্প জায়গার মধ্যে পুটলি পাকিয়ে বসেছেন দেখতে পেয়ে মেছের আলি খানিক সরে বসলেন। হোসনে আরাও হাত পা নেড়েচেড়ে বেশ আরাম করেই বসলেন। মেছের আলি খানিক হোসনে আরার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, 'আসমানে মানুষ কিছু দ্যাখার জন্য তাকায় না, আসমানে তাকায় আসমান দ্যাখার জন্য।' হোসনে আরা আকাশের দিকে তাকিয়ে ভুরু কুঁচকে বললেন, 'কিন্তু আসমানে যে আইজ চান নাই, তারা নাই!' মেছের আলি হোসনে আরার দিকে তাকালেন না। আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকেই বললেন, 'আসমানে চান তারা নাই বইল্যা কি তাকান যাইবো না এমুন কোনো কতা আছে!' হোসনে আরা টানা টানা গলায় বললেন, 'না এমুন কোনো কতা নাই, তারপরেও!' 'হুন বউ, তারপরেও বলতে কোনো কতা নাই। পূর্ণিমা রাইতের আসমানের এক রূপ আর অমাবস্যা রাইতের আসমানের আরেক রূপ। এই রূপ দুইভাবে চক্ষু মেইল্যা ধরে। একটার রূপ অইছে চান তারার- আরেকটার রূপ অইছে অন্ধকার কালা আসমানে। আমার কাছে ক্যান জানি চান তারার থাইক্যা কালা আসমানডাই ভালা লাগে। ক্যান জানোস!' হোসনে আরা বেশ কৌতূহলী গলায় বললেন, 'ক্যান?' মেছের আলি হোসনে আরার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, 'কারণ এই আকাশটা কলঙ্কে ভরা। এই আকাশটা কলঙ্কিনী। এই আকাশটারে দেখার মানুষ নাই, পছন্দ করার মানুষ নাই। এই আকাশটারে কারো ভালা লাগে না, তাই এই আকাশটারে আমার খুব ভালা লাগে। দ্যাখতে মুন চায়। সারারাইত তাকাইয়া থাকতে ইচ্ছা অয়। ইচ্ছার ভিতরে অবহেলার এক করুণ কিচ্ছা কয়। সে কিচ্ছা হুনবি বউ!'

Publisher: অন্যধারা
ISBN: 9789849366188
Number of pages: -


REVIEWS
গুলবানুর কথা শুনে হোসনে আরা ভুরু কুঁচকে ফেলেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে অন্যঘরে যাবার প্রস্তুতি নিতে নিতে বলেন, 'যাও মা তুমি কি কইতাছো না কইতাছো, কীয়ের পোকা-টোকা, আমি কিছুই বুইজ্যা উডতে পারতাছি না।' বলে হোসনে আরা অন্যঘরে চলে এলেন তাঁর স্বামীর কাছে। দেখতে পেলেন মেছের আলি দুয়ারে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। তিনি ভাবতে লাগলেন, মেছের আলি আকাশের দিকে তাকিয়ে কি দেখছেন! আজ তো অমাবস্যা রাত। আকাশে দেখার মতো কিছু নেই। হোসনে আরা মেছের আলির পাশে বসতে বসতে বললেন, 'কী দ্যাখতাছেন আসমানে তাকাইয়া! আইজ দ আসমানে চান নাই, তারা নাই দ্যাখার দ কিচ্ছুই নাই, তাকাইয়া আছেন যে!' হোসনে আরার কথা শুনে মেছের আলি কিছুটা অবাক হলেন। তিনি ভাবতে লাগলেন, 'হোসেনে আরা বুঝলো কি কইরা আমি আসমানের দিকে তাকাইয়া আছি!' তাঁর ভাবনায় ভুল ধরা পড়লো তখন যখন কিনা তিনি আবার ভাবতে লাগলেন, 'আসমানের দিকে মুখ কইরা থাকলে তো বুঝনেরই কতা আমি আসমানে তাকাইয়া আছি। এইডা দ না বুঝনের কিচ্ছু নাই! হোসনে আরা অল্প জায়গার মধ্যে পুটলি পাকিয়ে বসেছেন দেখতে পেয়ে মেছের আলি খানিক সরে বসলেন। হোসনে আরাও হাত পা নেড়েচেড়ে বেশ আরাম করেই বসলেন। মেছের আলি খানিক হোসনে আরার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, 'আসমানে মানুষ কিছু দ্যাখার জন্য তাকায় না, আসমানে তাকায় আসমান দ্যাখার জন্য।' হোসনে আরা আকাশের দিকে তাকিয়ে ভুরু কুঁচকে বললেন, 'কিন্তু আসমানে যে আইজ চান নাই, তারা নাই!' মেছের আলি হোসনে আরার দিকে তাকালেন না। আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকেই বললেন, 'আসমানে চান তারা নাই বইল্যা কি তাকান যাইবো না এমুন কোনো কতা আছে!' হোসনে আরা টানা টানা গলায় বললেন, 'না এমুন কোনো কতা নাই, তারপরেও!' 'হুন বউ, তারপরেও বলতে কোনো কতা নাই। পূর্ণিমা রাইতের আসমানের এক রূপ আর অমাবস্যা রাইতের আসমানের আরেক রূপ। এই রূপ দুইভাবে চক্ষু মেইল্যা ধরে। একটার রূপ অইছে চান তারার- আরেকটার রূপ অইছে অন্ধকার কালা আসমানে। আমার কাছে ক্যান জানি চান তারার থাইক্যা কালা আসমানডাই ভালা লাগে। ক্যান জানোস!' হোসনে আরা বেশ কৌতূহলী গলায় বললেন, 'ক্যান?' মেছের আলি হোসনে আরার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, 'কারণ এই আকাশটা কলঙ্কে ভরা। এই আকাশটা কলঙ্কিনী। এই আকাশটারে দেখার মানুষ নাই, পছন্দ করার মানুষ নাই। এই আকাশটারে কারো ভালা লাগে না, তাই এই আকাশটারে আমার খুব ভালা লাগে। দ্যাখতে মুন চায়। সারারাইত তাকাইয়া থাকতে ইচ্ছা অয়। ইচ্ছার ভিতরে অবহেলার এক করুণ কিচ্ছা কয়। সে কিচ্ছা হুনবি বউ!'
গুলবানুর কথা শুনে হোসনে আরা ভুরু কুঁচকে ফেলেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে অন্যঘরে যাবার প্রস্তুতি নিতে নিতে বলেন, 'যাও মা তুমি কি কইতাছো না কইতাছো, কীয়ের পোকা-টোকা, আমি কিছুই বুইজ্যা উডতে পারতাছি না।' বলে হোসনে আরা অন্যঘরে চলে এলেন তাঁর স্বামীর কাছে। দেখতে পেলেন মেছের আলি দুয়ারে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। তিনি ভাবতে লাগলেন, মেছের আলি আকাশের দিকে তাকিয়ে কি দেখছেন! আজ তো অমাবস্যা রাত। আকাশে দেখার মতো কিছু নেই। হোসনে আরা মেছের আলির পাশে বসতে বসতে বললেন, 'কী দ্যাখতাছেন আসমানে তাকাইয়া! আইজ দ আসমানে চান নাই, তারা নাই দ্যাখার দ কিচ্ছুই নাই, তাকাইয়া আছেন যে!' হোসনে আরার কথা শুনে মেছের আলি কিছুটা অবাক হলেন। তিনি ভাবতে লাগলেন, 'হোসেনে আরা বুঝলো কি কইরা আমি আসমানের দিকে তাকাইয়া আছি!' তাঁর ভাবনায় ভুল ধরা পড়লো তখন যখন কিনা তিনি আবার ভাবতে লাগলেন, 'আসমানের দিকে মুখ কইরা থাকলে তো বুঝনেরই কতা আমি আসমানে তাকাইয়া আছি। এইডা দ না বুঝনের কিচ্ছু নাই! হোসনে আরা অল্প জায়গার মধ্যে পুটলি পাকিয়ে বসেছেন দেখতে পেয়ে মেছের আলি খানিক সরে বসলেন। হোসনে আরাও হাত পা নেড়েচেড়ে বেশ আরাম করেই বসলেন। মেছের আলি খানিক হোসনে আরার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, 'আসমানে মানুষ কিছু দ্যাখার জন্য তাকায় না, আসমানে তাকায় আসমান দ্যাখার জন্য।' হোসনে আরা আকাশের দিকে তাকিয়ে ভুরু কুঁচকে বললেন, 'কিন্তু আসমানে যে আইজ চান নাই, তারা নাই!' মেছের আলি হোসনে আরার দিকে তাকালেন না। আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকেই বললেন, 'আসমানে চান তারা নাই বইল্যা কি তাকান যাইবো না এমুন কোনো কতা আছে!' হোসনে আরা টানা টানা গলায় বললেন, 'না এমুন কোনো কতা নাই, তারপরেও!' 'হুন বউ, তারপরেও বলতে কোনো কতা নাই। পূর্ণিমা রাইতের আসমানের এক রূপ আর অমাবস্যা রাইতের আসমানের আরেক রূপ। এই রূপ দুইভাবে চক্ষু মেইল্যা ধরে। একটার রূপ অইছে চান তারার- আরেকটার রূপ অইছে অন্ধকার কালা আসমানে। আমার কাছে ক্যান জানি চান তারার থাইক্যা কালা আসমানডাই ভালা লাগে। ক্যান জানোস!' হোসনে আরা বেশ কৌতূহলী গলায় বললেন, 'ক্যান?' মেছের আলি হোসনে আরার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, 'কারণ এই আকাশটা কলঙ্কে ভরা। এই আকাশটা কলঙ্কিনী। এই আকাশটারে দেখার মানুষ নাই, পছন্দ করার মানুষ নাই। এই আকাশটারে কারো ভালা লাগে না, তাই এই আকাশটারে আমার খুব ভালা লাগে। দ্যাখতে মুন চায়। সারারাইত তাকাইয়া থাকতে ইচ্ছা অয়। ইচ্ছার ভিতরে অবহেলার এক করুণ কিচ্ছা কয়। সে কিচ্ছা হুনবি বউ!'

Publisher: অন্যধারা
Category: বইমেলা-২০১৯
ISBN: 9789849366188
Number of pages: -

Related Products